জাতীয় বাজেট কি?

জাতীয় বাজেট হল সরকারের ভবিষ্যৎ আর্থিক পরিকল্পনার ডকুমেন্ট এবং পাশাপাশি জনগনের মানসিক ভরসার দলিল। আভিধানিক অর্থে, জাতীয় বাজেট হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব এবং রাষ্টীয় ব্য়য় সংবলিত একটি প্রাক্কলন বা এস্টিমেট যা সরকারে পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রী সংসদে উপস্থাপন করেন। সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট ও বিভিন্ন অর্জনের ভিত্তিতে কিছু কর প্রস্তাব এবং সংস্থাপন ব্যয়ের একটি প্রতিবেদন এবং বার্ষিক উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ। অর্থাৎ, জাতীয় বাজেট হচ্ছে একটি সুনির্দিষ্ট পথে যৌত্তিক নীতিমালা অবলম্বনে পরিবর্তন, উন্নয়ন এবং প্রগতির ধারাকে জাতীয় জীবনে অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী যোগান দেয়ার প্রক্রিয়া।

এক নজরে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট 

মোট বাজেট

৭৯৭,০০০ কোটি টাকা

পরিচালন ব্যয়

৫০৬,৯৭১ কোটি টাকা

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূুচি

২৬৫,০০০ কোটি টাকা

উন্নয়ন ব্যয়ের অংশ

৩৫.৩ শতাংশ

রাজস্ব আয় লক্ষ্য

৫৪১,০০০ কোটি টাকা

k

রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রা

৪৮০,০০০ কোটি টাকা

কর ব্যতিত রাজস্ব

৪৬,০০০ কোটি টাকা

রাজস্ব ঘাটতি শতাংশে

৩২.১ শতাংশ

মোট ঘাটতি

২৫১,৬০০ কোটি টাকা

বৈদেশিক ঋণ (অর্থায়ন)

৯০,৭০০ কোটি টাকা

অভ্যন্তরীণ ঋণ (অর্থায়ন)

১৬০,৯০০ কোটি টাকা

ব্যাংকিং খাতে ঋণের অংশ

৫৪.৭ শতাংশ

রাজস্ব আহরণের প্রধান প্রধান খাত

মূল্য সংযোজন কর বরাবরের মত সবচেয়ে বড় রাজস্ব আহরণের উৎস। এছাড়া এনবিআর-এর কর আওতার মধ্যে আয়কর ও মুনাফা কর, সম্পুরক শুল্ক, আমদানি শুল্ক এবং আবগারি শুল্ক ইত্যাদি প্রধান আয় খাতের সবগুলোই প্রস্তাবিত বাজেটে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে বাড়ানো হয়েছে। বিগত পাচঁ অর্থবছরে (২০১৫-১৬ থেকে ২০১৯-২০) আয়কর ও মুনাফা জাতীয় কর বৃদ্ধির হার গড়ে প্রায় ১৩ শতাংশের মত ছিল ।

গত দশ বছরের প্রকৃত রাজস্ব বৃদ্ধির হার

চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরে প্রথম নয় মাসের হিসেবে রাজস্ব আয় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ শতাংশের একটু বেশি। প্রথম নয় মাসে চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) মোট অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার ৬৩ শতাংশের একটু বেশি আহরণ করা সম্ভব হয়েছে। বিগত দশ বছরের রাজস্ব আহরণের চিত্র বলছে, রাজস্ব বৃদ্ধির হার ২০১৪-১৫ অর্থবছরের পর ২০১৯-২০ অর্থবছরেই সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি আবার বেড়ে গেছে।

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে খরচের ভাগ

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা (জিডিপির ১৭.৫ শতাংশ), যা ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অপেক্ষা ১২ শতাংশ বেশি।

এই ব্যয়ের মধ্যে ১১ শতাংশ অভ্যন্তরীন ও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যবহৃত হবে।

২০২১-২২ অর্থবছরের বিভিন্ন খাত ভিত্তিক ব্যয়ের চিত্র

খাতভিত্তিক বরাদ্দ বিভাজনে দেখা যাচ্ছে যে, জনপ্রশাসনকে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হলেও এর মধ্যে পেনশন, ভর্তুকি ও প্রণোদনা যুক্ত রয়েছে। শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে প্রায় ১৬ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। করোনা মহামারি কথা বিবেচনায় রেখে স্বাস্থ্য খাতে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছিল ৫.১ শতাংশ এবং এবার তা একটু বাড়িয়ে ৫.৪ শতাংশ রাখা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে আগের বছরের মতই ৫.৭ শতাংশ রাখা হয়েছে।

উন্নয়ন পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ দিক

মানব সম্পদে বিনিয়োগ

প্রস্তাবিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে মানব সম্পদ (শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সংশ্লিষ্ট খাত) খাতে ২৯ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মানব সম্পদে প্রকল্প বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৬৬ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা যা ২০২০-২১’র সংশোধিত বাজেট থেকে প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে । স্বাস্থ্যখাতে ১৭ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং শিক্ষাখাতে ২৩ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। মানব সম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে।

যোগাযোগ অবকাঠামোতে বরাদ্দ

প্রস্তাবিত বাজেটে যোগাযোগ অবকাঠামো (সড়ক, রেল, সেতু ও যোগযোগ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য) খাতে ২৬ শতাংশ বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। যার মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ পেয়েছে ২৮ হাজার ৪২ কোটি টাকা। এইখাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ ২০২০-২১’র সংশোধিত বরাদ্দের চেয়ে প্রায় ২১ শতাংশ বেশি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে ১২ শতাংশ হিসেবে মোট ২৭ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

 

কৃষি ও পল্লী উন্নয়নে বিনিয়োগ

সার্বিক কৃষি এবং গ্রামীণ উন্নয়ন খাতে (কৃষি, পানি সম্পদ, স্থানীয় সরকার, এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য) ২২ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। কৃষি ও পল্লী উন্নয়নের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকারে বিভাগের জন্য ৩৩ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা এডিপি বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। কৃষিখাতে নতুন ৪ টি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে মোট ৪৮ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা রাখা হয়েছে।

শেষ দশ বছরের বাজেট বরাদ্দের চিত্র